প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারন, লক্ষণ ও সমাধান

প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারন, লক্ষণ  ও সমাধান

প্রসাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার কারন, লক্ষণ ও সমাধান

আমরা সকলেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনের সাথে কমবেশী পরিচিত। প্রায় প্রত্যেকটি ঘরেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত তীব্র তাপদাহে অর্থাৎ গ্রীষ্মের সময় অনেকেরই প্রস্রাবে অস্বস্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তি হয়। এটি কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই খুব প্রচলিত সমস্যা। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে এটি হয়ে থাকে।তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের (Fungus) কারণেও প্রসাবে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণঃ

বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। একেকজনের একেক কারণে এই ইনফেকশনটি হয়। চলুন জেনে নেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার বিভিন্ন কারণগুলো সম্পর্কে।

১) প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করা। পানি আমাদের দেহের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। অপর্যাপ্ত পানি দেহের নানাবিধ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রস্রাবে জ্বলাপোড়া হয়। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সাধারণত তাদের মাঝেই দেখা দেয় যারা দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করে না।

২) নারীদের ক্ষেত্রে এই উপর্সগটি বেশ কষ্টদায়ক। মেয়েদের পায়ুপথের খুব কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। যার ফলে পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।

৩) নারীদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড। প্রতি মাসেই মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড হয়। সকলেই সেই সময় ন্যাপকিন কিংবা কাপড় ব্যবহার করে। সেই ন্যাপকিন বা কাপড়ের সাথেও জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণের সৃষ্টি করে।

আবার সঙ্গীর সাথে মেলামেশার ফলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই এইসব কারণগুলো বের করে এর প্রতিকার করা আবশ্যক।

উচ্চ রক্তচাপ -এর রোগীরা যেসব নিয়ম মেনে চলবেন এবং যেসব খাবার খাবেন

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণঃ

ইউরিন ইনফেকশনের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝে নিতে হবে যে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যাটি হচ্ছে।

১) প্রথমত প্রস্রাবের সময় প্রচন্ড পেট ব্যথা এবং পিঠের পিচে ব্যথা অনুভূত হয়।

২) প্রস্রাবের বেগ আসা স্বত্বেও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাবে না হওয়া এবং প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা।

৩)প্রস্রাবে বাজে গন্ধ ও ঘোলাটে ভাব, বমি ভাব বা বমি হওয়া

৪) প্রসাবের রঙ ধূসর কিংবা গাঢ় হলুদ কিংবা লালচে রঙ কিংবা ময়লা রঙের হওয়া।

৫) সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব অথবা কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর হওয়া।

৬) প্রসাবের মধ্যে রক্ত যাওয়া।

প্রসাবে জ্বালাপোড়ার ঘরোয়া সমাধানঃ

এই জ্বালাপোড়া অতি মাত্রায় বেড়ে গেলে জীবাণু দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পরে এবং কিডনিতে গিয়ে পাথর সৃষ্টি করে ফেলে। তাই এই সমস্যাকে বাড়তে দেয়া উচিত না। প্রাথমিক অবস্থাতেই এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আপনি যদি এই উপসর্গে বহুদিন ধরে ভুগে থাকেন তাহলে দেরী না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আর আপনি যদি প্রথম এই উপসর্গের মুখোমুখি হয়ে থাকেন এবং সাধারণ লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে, ঘরে বসেই এর প্রতিকার করতে পারবেন। তো, চলুন ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করার যায় তার কিছু উপায় জেনে নিই।

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
  • বেশিক্ষণ প্রসাব ধরে রাখবেন না। প্রসাবে ধরার সাথে সাথে প্রসাব করে ফেলবেন।
  • ইউরিন ইনফেকশন সেরে না উঠা পর্যন্ত চা-কফি, ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল পান করবেন না। কারণ এগুলো মূত্রথলির আরো ক্ষতি করতে পারে।
  • জাম জাতীয় ক্রেনবেরি ছাড়াও ব্লু বেরি ফল পেলে খাবেন,এগুলো কিডিনি ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাব ইনফেকশন দূর করতে উপকারি।
  • মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না।
  • মিলনের শেষে সাথে সাথে প্রসাব করবেন।
  • সবসময় মূত্রনালী পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছত্রাকরা খুব বেশি আক্রমণ করে থাকে।
  • আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে কোন কিছু অনুসরণ না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
  • পায়খান ও প্রসাব শেষে ভালোভাবে মলদ্বার ও মূত্রনালী পরিষ্কার করতে হবে।
  • যৌনাঙ্গে যেকোন ধরনের স্প্রে, পাউডার বা ক্যামিকেল এড়িয়ে চলুন, এগুলো খারপ ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক জন্ম দিয়ে থাকে।
  • ইমার্জেন্সি পিল কিংবা কনডম উভয়ই ব্যাকটেরিয়া জন্মদিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনুন।
  • প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই খেলে উপকার পাবেন।
  • প্রস্রাবের ইনফেকশনের সময় অ্যাসিডিক ফল (লেবু, কমলালেবু) বেশি খেলে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যেতে পারে।
  • ডাক্তার প্রেসক্রাইব করলে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স পুরো শেষ করুন। ভালো বোধ করলেও অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ করা জরুরি।